মেহেরপুর একাত্তর, ০৩ জানুয়ারি:
মেহেরপুর বিসিক শিল্প নগরীতে করোনা প্যাকেজের লোনের আবেদনের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়েছে এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি সহ তিন শিল্প উদ্যোক্তা। সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে বিসিক শিল্প নাগরীতে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় মেহেরপুর জেলা তাঁতী লীগের সহ সভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোনের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিসিক এলাকায় ঢুকে এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জনি সহ তিন শিল্প উদ্যোক্তাকে লাঞ্জিত করেন। লাঞ্চিত শিল্প উদ্যোক্তারা হলেন- মেহেরপুর স্কয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাবু, ভাই ভাই স্টিল গ্যালারীর মো. ফিরোজ আলী ও ফারুক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের পরিচালক ফারুক হোসেন।
ঘটনাস্থলে মেহেরপুর জেলা তাঁতী লীগের সহ সভাপতি মালেকুল ইসলাম টিটোন এসে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নিতে সাংবাদিকদের বাঁধা প্রদান করেন। টিটোন বলেন, এটা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে কে ঢুকবে না ঢুকবে আমি দেখবো। আমি মেহেরপুর জেলার একজন প্রতিনিধি, আমি মেহেরপুর জেলা তাঁতী লীগের সহ সভাপতি। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকরা ঢুকলে তাদেরও দেখে নেওয়া হবে। এসময় এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জনিকে লাঞ্চিত করেন তিনি।
শিল্প উদ্যোক্তা স্কয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাবু বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিসিকের মাধ্যমে সরকারের বিশেষ ঋন দেওয়া চালু রয়েছে। সেই ঋনের আবেদনের বিষয়ে আমি সহ ৪ জন উদ্যোক্তা খোঁজ নিতে গেলে এখানকার কর্মকর্তারা রাগান্বিত হয়ে ওঠেন। পরে কর্মকর্তা সহ অন্যান্যরা আমাদের ধাক্কা মেরে অফিস থেকে নামিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, অফিস খরচ বলে গত দুই মাস আগে আমার সাথে তিনি দুই হাজার টাকা নেন। তখন তিনি বলেন ৭ দিনের মধ্যে আপনার ফাইল রেডি করে আপনাকে লোন দেওয়া হবে কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাকে লোন দেওয়া হয়নি। লোনের আবেদন করার পর থেকে লোন আজ হবে, কাল হবে বলে তিনি হয়রানি করছেন। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার যে টাকা এসেছিল তখন আমি আবেদন করি। এসময় বলা হয়েছিল প্রথমেই আমাকে টাকাটা দেওয়া হবে। এই টাকা এসেছে অক্টোবর মাসে। কিন্তু অক্টোবর মাস থেকে আমাকে এযাবৎকাল ঘোরানো হচ্ছে। তারা বলছে আপনার কারখানা পরিদর্শন করবো তারপরে টাকা দেবো। কিন্তু এই সাত মাস ধরে কারখানা আর পরিদর্শন হয় না। আজকে এসে আমি যখন বলি কারখানা পরিদর্শনের নামে আমাকে ঘোরাতে পারেন না, আমাকে এভাবে ঘোরায়েন না। একথা বলায় আমাকে অফিসের কর্মকর্তা আশানুজ্জামান সহ অন্যান্য স্টাফরা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সিড়িতে ফেলে দেয়। পরে আমরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁতী লীগের নেতা মালেকুল ইসলাম টিটোন সহ কয়েক জন আমাদের এসে হুমকী ধামকি দেন।
চাঁদবিল কোলার মোড় এলাকার ভাই ভাই স্টিল গ্যালারীর পরিচালক ফিরোজ আলী বলেন, গত সাত মাস আগে লোনের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু লোন পাইনি। আবেদন জমা নেওয়ার কোন রশিদ দেয়নি। এবিষয়ে অফিস থেকে কোন তথ্য জানতে চাইলে হয়রানি হতে হয়। একই অভিযোগ করেন ফারুক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের পরিচালক ফারুক হোসেন ও রিমন বাবু।
জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নুর ইসলাম সুবাদ মুঠোফোনে বলেন, বিসিকে সে কেন যাবে? এভাবে তাঁতী লীগের পরিচয় দিয়ে যেখানে সেখানে হুমকী ধামকি দেবে এটা ঠিক না। বিষয়টা আমরা দেখছি। তবে এটা নিয়ে নিউজ করেন না।
মেহেরপুর বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক মো. আশানুজ্জামান বলেন, কাকে ঋন দেবো আর না দেবো সেটা আমাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা জবাব দিতে বাধ্য নয়। তা ছাড়া মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিখন আমার আত্মীয়। তিনি আরো বলেন, আবুল কালাম আমাদের হুমকী ধামকি দিলে তাকে আমাদের কর্মচারীরা ঘাড় ধরে বের করে দেন। আর টিটোন আমাদের কর্মকর্তা আসাদুলের আত্মীয়। তার ডাকে সে এসেছে।
বিসিক শিল্প নগরীর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক তাহেরা নাসরিন বলেন, লোন দেবার কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মে যারা পড়বে তারা লোন পাবেন। তবে বহিরাগত সন্ত্রাসীকে ডেকে যদি কাউকে হেনস্থা করা হয় তাহলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
