মেহেরপুর একাত্তর অনলাইন ডেস্ক, ১১ অক্টোবর:
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের ফাইভ জি সেবা ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকায় ১০টি বিটিএস বা বেইস ট্রানসিভার স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। পরে বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে ২শ বিটিএসে। কোন কোন এলাকার বিটিএসে চালু হবে তা এখনো নির্ধারণের অপেক্ষায় রয়েছে। এই সেবা চালুর লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) এরই মধ্যে টেলিটকের অনুকূলে ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৬০ মেগাহার্জ (৩ হাজার ৩শ ৪০ থেকে ৩ হাজার ৪শ) তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়েছে।
টেলিটক ১শ মেগাহার্জ তরঙ্গের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই বরাদ্দ হয়েছে শর্ত সাপেক্ষে এবং সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে। এক্ষেত্রে সব মোবাইল অপারেটরের জন্য ইউনিফাইড লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুমোদনের পর এর সব শর্ত মানতে হবে টেলিটককে। এছাড়া অন্য অপারেটরদের জন্য ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের তরঙ্গের যে মূল্য নির্ধারণ হবে, তা টেলিটকের জন্যও প্রযোজ্য হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ২শ ৫৪ তম সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। টেলিটক এরই মধ্যে এই তরঙ্গ বরাদ্দের চিঠি পেয়ে গেছে।
ফাইভ জি সেবার জন্য নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে সরকার এরই মধ্যে টেলিটককে ২ হাজার ১শ ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ২ হাজার ২শ ৪ কোটি টাকা। বাকি ৬০ কোটি টাকা টেলিটক নিজে বহন করবে। এছাড়া এই সেবার জন্য ২শ বিটিএস প্রস্তুত করতে টেলিটকের আরো প্রায় ২শ ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন গতকাল রবিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ জি সেবা চালু করতে পারবো।’ তিনি তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়া এবং ফাইভ জির ২শ বিটিএস প্রস্তুত করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবের তথ্যটি নিশ্চিত করে জানান, ফাইভ জি সেবায় ব্যবহারের জন্য দেশের বাজারে প্রয়োজনীয় মোবাইল হ্যান্ডসেটও রয়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিউইয়র্কে এক গোলটেবিল আলোচনায় বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমাদের ফাইভ জি প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ওয়েবিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, ১২ অথবা ১৬ ডিসেম্বর টেলিটকের মাধ্যমে ফাইভ জি সেবার উদ্বোধন করা হবে এবং অন্য সব অপারেটরের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশে ফাইভ জি তরঙ্গ নিলাম হবে। মন্ত্রী ওই দিন বলেন, ‘আশা করা যায় ২০২২ সালের মধ্যেই দেশের বেসরকারি মোবাইল অপারেটররাও ফাইভ জি চালু করতে সক্ষম হবে।’
তবে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের পক্ষে বলা হচ্ছে, দেশে ফাইভ জি চালুর জন্য যে ইকোসিস্টেম প্রয়োজন তা এখনো নেই। মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটককে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ জির জন্য অনুমোদন ও স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) প্রদানের সিদ্ধান্তটি সরকারের। আমরা এ জন্য সরকারকে স্বাগত জানাই। তবে পরবর্তী সময়ে অন্য অপারেটরদের ফাইভ জি সেবায় আসার যে কথা বলা হচ্ছে, তার জন্য দেশের ইকোসিস্টেম প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। এই সেবা যেহেতু শিল্প খাতে বহুল ব্যবহৃত হবে, তাই কলকারখানায় অটোমেশন বা মেশিন টু মেশিন কানেক্টিভিটি ইত্যাদি প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি ফাইভ জি এনাবল্ড মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বাড়ানোরও কোনো বিকল্প নেই। আমরা জানি, দেশে মোটামুটিভাবে ফোরজি এনাবল্ড হ্যান্ডসেটের ব্যবহার ৩০ শতাংশের মতো। তবে বিনিয়োগের বিবেচনা থেকে তরঙ্গের মূল্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে থ্রিজি ও ফোরজিতে বাংলাদেশে বেতার তরঙ্গের অতি উচ্চমূল্যের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আমরা জানি। ফাইভ জির জন্য তরঙ্গমূল্য নির্ধারণে বিশেষ বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।’
কেন ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড : বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২ বছর আগেই ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জন্য সম্ভাব্য তরঙ্গ হিসেবে ৩ হাজার ৫শ মেগাহার্জ বা ৩.৫ গিগাহার্জ নির্ধারণ করে এ তরঙ্গ বিভিন্ন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করে বিটিআরসি। ব্র্যাক নেট লিমিটেড তাদের ইন্টারনেট সেবার জন্য ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের সাত মেগাহার্জ তরঙ্গ ব্যবহার করে আসছিল এবং তা বহাল রাখার জন্য বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি জানিয়ে দেয়, এ তরঙ্গ বড়জোর ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল রাখা যাবে। এরপর তা ফেরত দিতে হবে এবং এ সময়ের মধ্যে তাদের তারবিহীন ইন্টারনেট সেবাকে তারযুক্ত সেবায় নিয়ে আসতে হবে।
৩ হাজার ৫শ মেগাহার্জ ব্যান্ডের তরঙ্গ ফেরত নেওয়ার যুক্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কার্যপত্রে ওই সময় বিটিআরসির বক্তব্য ছিল, ‘পরিবর্তনশীল বিশ্ব তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে উন্নত প্রযুক্তির বিকাশ সাধনের ফলে বিভিন্ন তরঙ্গ ব্যান্ডে আইএমটি (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশনস) সার্ভিসের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে আইএমটি সার্ভিসের জন্য উপযুক্ত তরঙ্গ ব্যান্ডগুলো চিহ্নিত করা এবং তা উন্মুক্ত করার বিষয়ে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ৩ হাজার ৫শ মেগাহার্জ তরঙ্গ ব্যান্ডটি ফাইভ জি সেবার জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী একটি ব্যান্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে ৩ হাজার ৫শ মেগাহার্জ এবং আইএমটি সেবার জন্য সর্বাধিক স্বীকৃত অন্যান্য তরঙ্গ ব্যান্ডগুলো ভবিষ্যতে ফাইভ জি ও সমসাময়িক সেবা (আইওটি) প্রদানের জন্য উন্মুক্তকরণের বিষয়টি বিটিআরসির সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।’
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ২শ ৫৪ তম সভায় বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের অনুকূলে ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে ৩০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া আছে। কিন্তু পুলিশ সে তরঙ্গ ব্যবহারের জন্য এখনো কোনো বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন করেনি। এ অবস্থায় পুলিশকে দেওয়া ৩.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের তরঙ্গ ৩ হাজার ৩শ ১০ থেকে ৩ হাজার ৩শ ৪০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে স্থানান্তর করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।